বুধবার, ৩০ Jul ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন

ভোগান্তির শেষ নেই ধুলাসার ইউনিয়নের অনন্তপাড়া মানুষের

ভোগান্তির শেষ নেই ধুলাসার ইউনিয়নের অনন্তপাড়া মানুষের

কলাপাড়া প্রতিনিধি:: কলাপাড়া উপজেলা ধুলাসার ইউনিয়নে ‘বর্ষা মৌসুমে বেড়িবাঁধ রাস্তায় জমে থাকা হাঁটু কাদায় হেঁটে পথ চলা দায়, আমাদের এ কষ্ট কেউই বুঝল না। এখন বয়স হয়েছে, চোখে তেমন একটা দেখতে পাই না, তার পরও জীবন-জীবিকার টানে এখনও লাঠিতে ভর করে হাঁটতে হয়। আমার বাপ- দাদারাও বর্ষা মৌসুমে এই কর্দমাক্ত রাস্তায় সারাজীবন হেঁটেছেন। আমরাও সেই একই পথে চলছি। আর কবে হবে এই এলাকার বেড়িবাঁধের ওপর ইটের সোলিংয়ের বা পাকা রাস্তা নির্মাণ।’ আক্ষেপ নিয়েই এসব কথা বলছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ধুলাসার ইউনিয়নে ৫ নম্বর গ্রামের বাসিন্দা আজহার খাঁন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি কাঁচা রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী মানুষকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দেখে বুঝার উপায় নেই। এটি কাঁচা রাস্তা, না হাল চাষ করা জমি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটু সমান কাদা জমে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গুরুত্বপুর্ন সড়কটি এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর হলে কাঁচা রাস্তাটি পাকা হয়নি এমন দুর্দশা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা মহীপুর ইউনিয়নের মহীপুর বাজার থেকে কাটাভারানী বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়নের মনসাতলী হয়ে পাশ্ববর্তী ধুলাসার ইউনিয়নের তারিকাটা-অনন্তপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল দশায় থাকায় প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন চলাচল চরম দুর্ভোগ পোহাতে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তা কাদায় একাকার হয়ে যায়। কাদা পানির কারনে কোনো যানবাহন তো দুরের কথা জুতা পায়ে হাঁটাও অসম্ভব ব্যাপার। মনে হয় যেন রাস্তা নয়, চষা ক্ষেত। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়ে চলচল করতে হয় এসব গ্রামের হাজারো মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী একটি রাস্তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে আবেদন করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির বিভিন্ন অংশের মাটি ক্ষয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। এ সড়কের মহিপুর বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ইট সলিং রাস্তা ছিল। বর্তমানে তার চিহৃ পর্যন্ত নেই। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে কাদামাটিতে একাকার হয়ে সম্পুর্ন রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তিনটি ইউনিয়নের ২০ গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়া শুনার জন্য এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ধুলাসার বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহিপুর মোক্তিযোদ্ধা কলেজ, বিপিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনসাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসা, ধুলাসার আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজ, চরচাপলী ইসলামীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বৌলতলী সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অনন্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াকাটা এবতেদায়ী মাদ্রাসা যেতে হয়। এতে স্কুল-কলেজগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্টানে যেতে নানা দুর্ভোগ পড়ে। পাউবোর বেড়িবাঁধে ইটের রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে গ্রামের বাসিন্দাদের নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলগামী কোমলমতি ছেলে মেয়েরা কর্দমাক্ত রাস্তায় চলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে বই, খাতা ও জামা কাপড় নষ্ট হওয়ায় তারা নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত হতে পারে না। এ কারণেই এ বর্ষা মৌসুমে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কিছুটা কম হচ্ছে বলে জানান তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মন্ডলী ও অসুস্থ্য৷ ও গর্ববতী মায়েদের নিয়ে কষ্টের কোনো শেষ থাকে না। এত ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে ঘটেছে অহরহ দুর্ঘটনা। এ কাঁচা রাস্তার কারনে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপন্য কোনো বাজারে না নিতে পারায় আশ পাশের ছোট বাজারে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এখানে সপ্তাহের বাজার বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। দূরদুরান্ত থেকে কৃষিপণ্য ও মালামাল মাথায় করে এলাকাবাসীকে হাটে যেতে হয়। একমাত্র থানা, কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ভুমি অফিস, মৎস্য বন্দও যেতে ওই তিনটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের কাচা রাস্তা।

তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেনি শিক্ষার্থী ফারজানা জানান, কাদা পানিতে ক্লাস করতে গিয়ে পায়ে ক্ষত হয়ে গেছে। আঙুলে ক্ষত দেখিয়ে ফারজানা আরো বলেন, অনেক দিন ভেজা কাপড় চোপড়ে ক্লাস করতে হয়। জরুরী ভিক্তিতে কাচা রাস্তাটি পাকা করন খুবই দরকার।
ধুলাসার আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজের একাদ্বশ শ্রেনি সজিব বলেন, রাস্তা মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় চলাচলের পথে অতিরিক্ত পানিতে কলেজের ইউনিফরম নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষা হলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

ধুলাসার বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, কাচা রাস্তা কারনে ওই রাস্তা আসা শিক্ষার্থীরা বর্ষা মৌসুমে সংখ্যা কমে যায়। বর্ষা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় আসতে চায় না। বর্ষা মৌসুমে কর্দমাক্ত রাস্তায় তাঁকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক সময় পা পিছলে স্কুলগামী কোমলমতি ছেলে মেয়েরা পড়ে যায়। দ্রুত বেড়িবাঁধের রাস্তায় ইটের সোলিং বা পাকা করন দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মহিপুর, ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী ফজলু গাজী, আবদুল রহিম জানান, জনস্বার্থে ওই কাঁচা রাস্তাটি পাকা করা উচিত। যাহা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এটা অনেক বড় বরাদ্দের ব্যাপার। এজন্য এলজিইডি মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কলাপাড়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল এলজিইডি প্রকৌশলী মো. সাদেকুর রহমান একুশের কন্ঠকে জানান, নতুন প্রজেক্ট কাজ আসলে দেখি ওই কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরন ব্যবস্থা করবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com